এই দিনকাল: ‘আই লাভ মহম্মদ’ (I Love Muhammad) স্লোগানের সমর্থনে জমায়েত ঘিরে উত্তেজনা উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে। শুক্রবার নামাজের পর এই স্লোগানের সমর্থনে জড়ো হয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। অভিযোগ, সেই জমায়েত থেকে পাথর ছোঁড়া হয়। এর পর পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ‘আই লাভ মহম্মদ’ পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে যে ঝামেলার সূত্রপাত হয়েছিল, এদিনের ঘটনা সেই তালিকায় নবতম সংযোজন।
স্থানীয় ধর্মগুরু ও ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের প্রধান মাওলানা তৌকির রাজা ‘আই লাভ মহম্মদ’ স্লোগানের সমর্থনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে শুক্রবার নামাজের পর বেরিলির ইসলামিয়া মাঠে বিশাল জনতা জড়ো হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর কানপুরে ‘আই লাভ মহম্মদ’ পোস্টার লাগানো একটি তাঁবু সরিয়ে ফেলার পর ৯ জনের নামে এবং ১৫ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। সেই ঘটনার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও ব্যক্তি।
জুম্মার নামাজের পর, বিশাল পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হয়। সেই বিক্ষোভ থেকে কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের দিকে পাথর ছোঁড়ে বলে অভিযোগ। এর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তারা। যারা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করেছে, সেই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বরেলির স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপর মহল থেকে। বরেলির ইন্সপেক্টর জেনারেল অজয় সাহনি বিষয়টি নিয়ে জানান, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘পুলিশ ফ্ল্যাগ মার্চ করছিল এবং লোকজনকে নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিল। পরে, জনতার মধ্যে থেকে কেউ কেউ পাথর ছোঁড়ে এবং গুলি চালায়। কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে।’
অন্য দিকে পুলিশের লাঠিচার্জকে নিন্দা জানিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, লাঠিচার্জ সরকারের দুর্বলতার লক্ষণ। তাঁর কথায়, ‘সরকার লাঠিচার্জ নয়, সম্প্রীতি ও সদিচ্ছার সঙ্গে কাজ করে। অত্যন্ত নিন্দনীয়!’
কেন ‘আই লাভ মহম্মদ’ স্লোগান ঘিরে বিতর্ক? শুরুটা কী ভাবে হল?
গত ৪ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের কানপুরে ঈদ-এ-মিলাদ-উন-নবী মিছিলের সময় পথের ধারে একটি তাঁবুতে ‘আই লাভ মহম্মদ’ পোস্টার লাগানো নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। স্থানীয় হিন্দু গোষ্ঠীগুলির তরফে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে একটি মিশ্র সংস্কৃতির পাড়ায় লাগানো হয়েছে, যেখানে কিনা ঐতিহ্যগতভাবে রাম নবমীর মতো হিন্দু উৎসব পালন করা হয়।
গোটা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন উভয় সম্প্রদায় একে অপরের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ করে। হিন্দু পক্ষের অভিযোগ, তাদের পোস্টার নষ্ট করা হয়েছে। অন্য দিকে, মুসলিম পক্ষ দাবি করে শুধুমাত্র নবী মহম্মদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এই ঘটনার পর শীঘ্রই, সমাজ মাধ্যমে #ILoveMuhammad হ্যাশট্যাগটি ব্যাপকভাবে ট্রেন্ডিং হয়।
ঐতিহ্যবাহী তাঁবুটি সরিয়ে নতুন জায়গায় বসানোর কথা উল্লেখ করে কানপুর পুলিশ গত ৯ সেপ্টেম্বর ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশের তরফে জানানো হয়, রাস্তায় তাঁবু বসানোর কারণে এফআইআরটি করা হয়েছে, পোস্টারের বিরুদ্ধে নয়।হায়দরাবাদের সাংসদ এবং আইমিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এই বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ‘যদি কেউ বলে, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’, তাহলে সমস্যা কী? ‘ভালবাসা’ লেখায় সমস্যা কোথায়? এর মাধ্যমে আপনি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলিকে কী বার্তা দিতে চান? ‘আমি মহাদেবকে ভালোবাসি’ লিখলে সমস্যা কোথায়? এটা করা উচিত, এটা তাদের বিশ্বাস।’ প্রসঙ্গত, ‘আই লাভ মহম্মদ’ স্লোগানের সমর্থনে যখন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মিছিল ও জমায়েত হচ্ছে, সেই আবহে বারাণসীতে একটি পাল্টা প্রচারণা শুরু হয়। যেখানে হিন্দু পক্ষের ধর্মীয় নেতারা ‘আই লাভ মহাদেব’ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নামেন।