এই দিনকাল: দেশের একাধিক বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করার প্রতিবাদে মিছিলে হাঁটলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূল নেত্রী। এদিন তাঁর সঙ্গে মিছিলে পা মেলান দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মিছিলের সামনের সারিতে দেখা যায় রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে।
বুধবার মিছিল শেষে বক্তৃতা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ভাষণে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি। পাশাপাশি সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা দেওয়া হয় মিছিল থেকে। বাংলা থেকে যেমন পরিযায়ী শ্রমিক অন্য রাজ্যে কাজে যান, তেমনই ভিন রাজ্য থেকেও অনেকে বাংলায় কর্মসূত্রে আসেন। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান এদিন সেই বিষয়টি তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে কোনও খারাপ আচরণ করা হয় না।
এদিন ভাষণে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার গোপনে একটি বিজ্ঞপ্তি বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে পাঠিয়েছে, যার ফলে বাঙালিদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভারত সরকার একটি নোটিফিকেশন করেছে। সেই নোটিফিকেশনটা আমরা চ্যালেঞ্জ করব। লুকিয়ে লুকিয়ে করেছে এবং যেখানে যেখানে বিজেপি আছে, সেখানে পাঠিয়েছে। তাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, যাকেই সন্দেহ হবে, বাংলায় কথা বলে, অ্যারেস্ট করবে, ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে।’
বুধবারের মিছল শেষে নিজের ফেসবুক পেজেও একটি পোস্ট করেছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি লিখেছেন, ”বাংলা ভাষার অপমান – বাংলার অপমান’ তা স্মরণে রাখতে হবে বাংলা-বিরোধীদের। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর অমানবিক অত্যাচার, নিপীড়ন এবং ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের আটক করা হচ্ছে। বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও বাংলার শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।’
তাঁর আরও সংযোজন, ‘বাংলা-বিদ্বেষ এই মনোভাবের বিরুদ্ধে আজ, কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মহামিছিলে এবং প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলাম। এরই সঙ্গে ‘শহিদ স্মরণে’ একুশে জুলাই-এর আমন্ত্রণ জানালাম বাংলার আপামর জনগণকে। আমি চুপ থাকব না, যতক্ষণ না বিজেপি এই বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ না করবে। তাদের অপপ্রচার-কুৎসার বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার সময় এসেছে। বাংলার ভূমিতে জন্ম নিয়েছেন হাজার বিপ্লবী – মনীষী। স্বাধীনতা সংগ্রামে শহিদ হয়েছেন হাজার হাজার বাঙালি। তাঁদের মহান কর্মের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে তুলে ধরেছেন বিশ্বের আঙিনায়, সেই বাংলার মাটিকে অপমান আমি মেনে নেব না। আমরা সব ভাষাকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান করি, তবুও বারবার আঘাত নেমে আসে বাংলার উপর। বাংলাকে আঘাত করলে, বাংলা-বিরোধীদের বিরুদ্ধে শোনা যাবে বাংলার গর্জন! কৃষক-বিরোধী, দলিত-বিরোধী, নারী-বিরোধী, ভাষা-বিরোধী শক্তিকে বাংলা থেকে আগেও পরাজিত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী ২৬-এর নির্বাচনেও একই অবস্থা করবে বাংলার মানুষ।’