এই দিনকাল: কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর মাওবাদী বিরোধী অভিযানের মধ্যে ছত্তিশগড়ে আত্মসমর্পণ করলেন ১৭০ জন মাওবাদী (Maoists)। অস্ত্র ছেড়ে মূল স্রোতে ফিরে আসাদের মধ্যে রয়েছেন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাব-জোনাল ইনচার্জ এবং মাওবাদী সামরিক শাখার গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ। গত দুই দিনে দেশে মোট ২৫৮ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ (Home Minister Amit Shah) জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে অমিত শাহ লিখেছেন, ‘নকশালবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে একটি যুগান্তকারী দিন। আজ, ছত্তিসগড়ে ১৭০ জন নকশাল আত্মসমর্পণ করেছেন। গতকাল রাজ্যে ২৭ জন তাঁদের অস্ত্র সমর্পণ করেছেন। মহারাষ্ট্রে, গতকাল, ৬১ জন মূলধারায় ফিরে এসেছেন। গত দুই দিনে মোট ২৫৮ জন চরম বামপন্থী সহিংসতা ত্যাগ করেছেন।’
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, রূপেশ এবং তাঁর সহযোগীরা উসপারি ঘাট দিয়ে ইন্দ্রাবতী নদী পার হওয়ার পর ভৈরামগড়ের দিকে গিয়েছেন। তাঁরা বিজাপুরে পৌঁছানোর পর, জগদলপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করা হয়। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘আমাদের নীতি স্পষ্ট: যাঁরা আত্মসমর্পণ করতে চান তাঁদের স্বাগত, এবং যাঁরা বন্দুক চালিয়ে যাবে তাঁদেরকে আমাদের বাহিনীর রোষের মুখোমুখি হতে হবে। এখনও যাঁরা নকশালবাদের পথে আছেন তাঁদের কাছে আমি আবারও আর্জি জানাচ্ছি, তাঁরা অস্ত্র ছেড়ে মূলধারায় যোগ দিন। আমরা ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের আগে নকশালবাদকে উপড়ে ফেলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এদিন নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ করে ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি) ভৈরামগড়কে একটি ভার্চুয়াল দুর্গে পরিণত করেছিল। উসপারি ঘাট থেকে ভৈরামগড় পর্যন্ত রাস্তাগুলিতে সর্বক্ষণ নজরদারি চালানো হয়। অভিযান তদারকি করার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিজাপুরে মোতায়েন ছিলেন। সূত্রের খবর, রূপেশ প্রায় ১৩০ জন শীর্ষ নকশাল ক্যাডারকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। যাঁদের মধ্যে একজন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (সিসিএম), দুজন ডিকেএসজেডসি সদস্য এবং ১৫ জন ডিভিসিএম ক্যাডার ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মাদ ডিভিশনের বেশ কয়েকজন সদস্য আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ছিলেন।আত্মসমর্পণের ফলে প্রচুর পরিমাণে অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার হয়। বহু একে ৪৭, ইনসাস রাইফেল, এসএলআর এবং কার্বাইন উদ্ধার করে পুলিশ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দেড় শতাধিক মাওবাদীর আত্মসমর্পণ দক্ষিণ ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের যুদ্ধশক্তিতে বিরাট ক্ষত তৈরি করেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, ‘এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে ছত্তিশগড়ের অবুঝমাড় এবং উত্তর বস্তার, যা একদা সন্ত্রাসের শক্ত ঘাঁটি ছিল, আজ নকশাল সহিংসতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন, দক্ষিণ বস্তারে কেবল বিক্ষিপ্ত নকশালরাই রয়ে গেছেন, যাঁদেরকে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী শীঘ্রই নির্মূল করবে।’ পলিটব্যুরো সদস্য সোনু ওরফে ভেনুগোপাল আগেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন। যা মাওবাদী সংগঠনটির কাছে একটা বড় ধাক্কা ছিল। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়া রূপেশ সংঘর্ষ বিরতির পক্ষে ছিলেন। এপ্রিল মাসে, তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে একটি প্রেস নোটও জারি করেছিলেন।
ছত্তিসগড়ের উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় শর্মা বলেন, ‘আমরা মূল স্রোতে ফিরে আসা নকশালদের লাল গালিচা দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছি। বস্তারের মানুষ লাল সন্ত্রাসকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিজাপুর বা কাঁকেরে যেকোনো আত্মসমর্পণ শান্তির দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া, এবং আমরা তাঁদের সকলকে স্বাগত জানাব।’
উল্লেখ্য, বাম চরমপন্থার বিরুদ্ধে ছত্তিসগড়ে কয়েক দশক ধরে লড়াই চালাচ্ছে সরকার। চলতি বছরটি ঐতিহাসিক বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। সিপিআই (মাওবাদী) এর আট শীর্ষ নেতা-সহ ৩১২ জন মাওবাদী এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন। ৮৩৬ জন ক্যাডারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১,৬৩৯ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন, যা ছত্তিশগড়ের জন্য একটি রেকর্ড। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুসারে, মাওবাদী সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সংখ্যা ১২৬ থেকে কমে মাত্র তিনটিতে দাঁড়িয়েছে – বিজাপুর, সুকমা এবং নারায়ণপুর, সব কটিই ছত্তিসগড়ে।
