Panchayat Season 4: ‘পঞ্চায়েত’, একটি সাবালকত্ব অর্জনের নাম

আকাশ রায়

কয়েকদিন ফেসবুক স্ক্রোল করতে ভয় পাচ্ছি,খুব ভুল করেও যদি স্পয়লারে চোখ পড়ে যায়! তাই আগের রাতের ঘুম কে অনেকটা অগ্রাহ্য করে দেখলাম পঞ্চায়েত সিজন ৪ (Panchayat Season 4)। জিতু ভাইয়া ওরফে সচিবজী ওরফে জিতেন্দ্র কুমার কে বরাবরই ভালো লাগে তার সাবলীল অভিনয়ের জন্য। তাই বাড়তি উৎসাহ সেখান থেকেই পাওয়া।

বাকি সিজনগুলোর মতো এবারেও সিরিজটার একটা স্থিতধী ভঙ্গিমা রয়েছে। তবে সবচেয়ে আকর্ষণ হলো এই সিরিজের চরিত্রেরা, বিশেষত নেগেটিভ চরিত্ররা। আপনি তাদের সেই মাথায় রক্ত ওঠা অভিনয় দেখে রেগে যেতে পারেন, প্রয়োজনে মনে মনে (একা থাকলে,অথবা কমফোর্ট জোনে থাকলে) দুটো অশ্রাব্য গালিগালাজও করতে পারেন কিন্তু ঘৃণা করতে পারবেন না। এরা হয়তো কিছুটা সরল, কিছুটা নিজের স্বার্থের প্রতি অপ্রতিরোধ্য কিন্তু সেই অর্থে ক্ষতিকারক নয়। ভূষণ অথবা মাধবের কথা আলাদা না বললেও বিনোদ চরিত্রটি এই সিজনে টুপি খুলে রাখতে বাধ্য করায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে চোখের খেলায় ডুবতে ভালোবাসি, তাই মুখের কথার চেয়ে চোখ আমাকে বেশি টানে সবদিন। বিনোদ যখন ‘গদ্দার’ হতে আপত্তি জানায় তার চোখে আশ্চর্য উদাসীনতা ছিল আর ছিল সাবলীলতা। 

সচিব আর রিঙ্কির কেমিষ্ট্রি এই সিরিজে সবচেয়ে ওয়েটেড অংশ। সেখানে তারা রীতিমতো প্রশংসার দাবি রাখে। একটা গ্রাম্য প্রেমের জেনুইন দৃশ্যতে যেটুকু প্রয়োজন তার একচুলও বেশি হয়নি। পরিচালক এখানে মুন্সিয়ানার পাশাপাশি ভীষণরকমের প্রোফেশনাল, কারণ দর্শকদের প্রতীক্ষিত দৃশ্যের ক্ষেত্রেও তিনি কোনোভাবেই আবেগপ্রবণ নন। এটি আসলেই একটা স্লো এবং গভীর প্রেমের পরিণতি।

আমরা নিজেদের জীবনযুদ্ধে কখনও জিতি,বেশিরভাগ হারি। এখানের চরিত্ররা কেউ Larger than Life নয়। জীবনের পাশাপাশি এই সিরিজেও সেই বার্তা খুব স্পষ্ট। রিয়েলিস্টিক মানে অবশ্যই জিতে যাওয়া নয়, এই কনসেপ্ট চিরদিন মনে থেকে যাবে। দিনযাপনের পাশাপাশি পঞ্চায়েতও সাবালক হচ্ছে ধীরে ধীরে। সচিবের গ্রামে এসে স্ট্রাগল থেকে শুরু হওয়া এই সিরিজ এখন বিভিন্ন সামাজিকতার নিদর্শন হয়ে উঠছে।

আসলে ফুলেরা একটি গোলকধাঁধা, চক্রবূহ্য। আর সচিব এখানে অভিমণ্যু, যে এসে তো পড়েছে আর দিনের পর দিন জড়িয়ে যাচ্ছে এর মায়ায়। এই মায়ার বাঁধনের প্রেমে যে পড়েছে সে জানে, এর থেকে বেরোনোর পথ তার নেই, অথবা চায়ও না। আবার অপেক্ষা, পঞ্চায়েত ফিরুক আবার, আমরাও জীবন যুদ্ধে ছুটে বেড়াই। মাঝে ক্লান্ত হতে পারি, কিন্তু আবার ফিরব, সেই পরিচিত লিপ্সায়, সেই ফুলেরা তে, সেখানে সচিব আর রিঙ্কির প্রেম, প্রল্লাদের অভিমান, প্রধানের বুক ভাঙা কষ্ট আর বিকাশের সারল্য- সবটা রাখা আছে।

Leave a Comment